প্রসঙ্গ: তেল-গ্যাস অনুসন্ধান

0
17

হচ্ছে-হবে করে থেমে যায় অনেক সম্ভাবনার দ্বার। আমাদের দেশ খনিজসম্পদে সমৃদ্ধ একটি দেশ। ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ভূতাত্ত্বিক পরিবেশে সঞ্চিত বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ খনিজসম্পদগুলোর মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, চুনাপাথর অন্যতম। এছাড়া রয়েছে তেল, কঠিন শিলা, নুড়িপাথর, গণ্ডশিলা, কাচবালি, নির্মাণকার্যে ব্যবহৃত বালু, চীনামাটি, ইটের মাটি, পিট এবং সৈকত বালিতে ভারী মণিক। কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় আমরা বঞ্চিত হচ্ছি এসব সম্পদের উপকার ভোগ থেকে। তবে এত সংকট আর হতাশার মধ্যে আশার একটি সংবাদ পাওয়া যায়, বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আগামী সপ্তাহে নতুন করে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এতে অংশ নিতে বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক কোম্পানি ইতোমধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বঙ্গোপসাগরে ২৪টি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ৫৫টি আন্তর্জাতিক কোম্পানিকে আহ্বান জানানো হয়েছে। বিড ডকুমেন্ট জমা দেয়ার জন্য অংশগ্রহণকারী কোম্পানিগুলো ৬ মাস সময় পাবে। ২০১০ সালে গভীর সাগরে ডিএস-১০ ও ডিএস-১১ ব্লকে কাজ করতে আগ্রহ দেখায় কনোকো ফিলিপস। তারা ২ডি জরিপ শেষে গ্যাসের দাম বাড়ানোর দাবি জানায়। কিন্তু তাদের দাবি পেট্রোবাংলা মেনে না নেয়ায় কাজ না করেই চলে যায় কনোকো। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার স্যান্তোস ও দক্ষিণ কোরিয়ার পস্কো দাইয়ু চুক্তির পর কাজ ছেড়ে চলে যায়। মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি এক্সন মবিল গভীর সমুদ্রের ১৫টি ব্লক একসঙ্গে ইজারা নিতে গত বছর চেষ্টা করেছিল। উল্লেখ্য, ২০১২ সালে ভারতের সঙ্গে ও ২০১৪ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হয়। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জানান, আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করার জন্য সব মহলেরই অনুমোদন পাওয়ার পর দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। পেট্রোবাংলা ডাটার জন্য আলাদা আটটি প্যাকেজ তৈরি করেছে। আগ্রহী কোম্পানি এই প্যাকেজগুলো কিনে আমাদের ব্লকগুলো সম্পর্কে তথ্য পাবে। জানা গেছে, তেল-গ্যাস পাওয়া গেলে বহুজাতিক কোম্পানি বিক্রির জন্য প্রথমে পেট্রোবাংলাকে প্রস্তাব দিতে হবে। পেট্রোবাংলা কিনতে না চাইলে তৃতীয়পক্ষের কাছে তেল-গ্যাস বিক্রির সুযোগ থাকবে। পিএসসি সংশোধন করায় মার্কিন কোম্পানি শেভরন, এক্সন মবিলসহ অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহ দেখিয়েছে। বাংলাদেশের শেয়ার গভীর সমুদ্রে ৩৫-৬০ শতাংশ এবং অগভীর সমুদ্রে ৪০-৬৫ শতাংশ পর্যন্ত ওঠানামা করবে। অন্যদিকে আগে গ্যাসের দাম নির্ধারণ করে দেয়া হতো। সংশোধিত পিএসসিতে দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি। ‘ব্রেন্ট ক্রড’-এর আন্তর্জাতিক বাজারের দামের সঙ্গে গ্যাসের দাম ওঠানামা করবে। সত্যি বলতে, নিজস্ব সম্পদ অনুসন্ধানে জোর না দিয়ে জ্বালানি আমদানির দিকে ঝুঁকে যায় সরকার। ২০১৮ সাল থেকে এলএনজি আমদানি শুরু হয়। এরপর ডলার সংকটে আমদানিও ব্যাহত হয়। এখন আবার দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানে জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে। তবে এতে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা কমাতে হবে। দেশের গ্যাস দরকার। সমুদ্রে গ্যাস পাওয়া গেলে তা বড় প্রাপ্তি। তবে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বড় বিনিয়োগের ঝুঁকি থাকে। তাই বিদেশি কোম্পানিকে আকৃষ্ট করতে পিএসসি হালনাগাদ করা হয়েছে। এটি এখন বিশ্বের তৃতীয় আকর্ষণীয় পিএসসি। এবার বেশ ভালো সাড়া পেয়ে সমুদ্রসম্পদের মজুত জানা ও উত্তোলনের সুফল পাব বলে আমরা আশাবাদী।